ভুমিকা…
১) বয়ঃসন্ধিকাল কি?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী জীবনের ১০-১৯ বৎসর সময়টাই হলো কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল। শৈশব ও যৌবনের এই সন্ধিক্ষণে ছেলেমেয়েদের শারিরীক ও মানসিক পরিবর্তন হয় ও তারা প্রজননক্ষম হয়।
২) বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক পরিবর্তনগুলো কি কি?
বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক পরিবর্তনগুলো হলো-
- – মানসিক ভাবে অস্থির থাকে এবং যে কোন ঝুঁকি নিতে প্রস্তত্ত থাকে;
- – ছেলেমেয়েরা নিজেকে প্রাপ্তবয়ষ্ক ভাবতে শুরু করে এবং অন্যদের কাছ থেকে সে অনুযায়ী আচরন আশা করে;
- – কৌতুহল বাড়ে ও যৌনতা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে;
- – স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে চায়;
- – আর্থিক ভাবে স্ব-নির্ভর হতে চায়;
- – নিজেকে আকর্ষনীয় করে তুলতে চায়;
- – বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গ ভালবাসে ও তাদের উপর নির্ভর করে;
- – আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি পায় ও আত্মকেন্দ্রিক হয়;
- – লজ্জা ভাব বেড়ে যায়;
- – নিজের সম্পর্কে অন্যদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবনা শুরু হয়;
৩) মাসিক কি? এই সময় করণীয় কি?
মেয়েদের প্রতিমাসে যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয় তাকে ঋতুস্রাব বা মাসিক বলে। ঋতুস্রাব সাধারণত ১০ থেকে ১৪ বৎসের বয়সের মধ্যে শুরু হয় এবং ৪৫-৫০ বৎসর পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার হতে থাকে। প্রতিমাসেই ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত রক্তস্রাব হয়ে থাকে। প্রথম ২/৩ দিন একটু বেশী এবং পরবর্তীতে দিনগুলিতে কম রক্তস্রাব হয়ে থাকে।
বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। সুতরাং এটা নিয়ে ভয় ও সংকোচের কোনো কারন নেই।
মাসিকের সময় রক্ত যেন কাপড়ে লেগে না যায় সেজন্য স্যানিটারী ন্যাপকিন (যদি কেনা না যায় তবে পরিষ্কার পাতলা কাপড় ভাঁজ করে) ব্যবহার করতে হবে। রক্তস্রাবের পরিমান অনুযায়ী স্যানিটারী ন্যাপকিন বা কাপড় দিনে অন্ততঃপক্ষে ২ থেকে ৬ বার বদলাতে হবে এবং যথাস্থানে ফেলতে হবে। কাপড় ব্যবহার করলে রৌদ্রে শুকিয়ে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য পরিষ্কার স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং নিয়মিত গোসল করতে হবে। প্রতিদিনের নিয়মিত কাজকর্ম করতে হবে, যেমন স্কুলে যাওয়া, গৃহস্থলী কাজ ইত্যাদি এবং পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
৪) ভালো স্বাস্থ্য ধরে রাখতে হলে কি কি করতে হবে?
শরীর সুস্থ রাখতে হলে পরিমিত পরিমানে পুষ্টিকর খাবার যেমন- ডাল, ছোট মাছ, শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, দুধ, মাংস, গুড় ইত্যাদি খেতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি সুস্বাস্থের জন্য প্রচুর পরিমানে নিরাপদ পানি পান করা এবং সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম, বিশ্রাম ও খেলাধুলা করা দরকার।
৫) বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো কি?
যখন একটি মেয়ে ১০-১২ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। এই বয়সে মেয়েদের দেহে হরমোন তৈরি হয়। হরমোনের কারনে মেয়েদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। যেমন- উচ্চতা বাড়ে, মাসিক শুরু হয়, স্তন বড় হয়, বগলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায় ইত্যাদি।
এই পরিবর্তনগুলোই হচ্ছে একটি মেয়ের বড় হয়ে ওঠার স্বাভাবিক লক্ষণ।
৬) বড় হলে ছেলেদের গলার স্বর ভেঙে মোটা হয়ে যায় কেন?
গলার স্বর মানুষের ভোকাল কর্ড নামক অঙ্গের ওপর নির্ভর করে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের ভোকাল কর্ড এর পরিবর্তন হয়। যার ফলে তাদের গলার স্বর ভেঙ্গে যায় এবং ভারি হয়।
৭) স্বপ্নদোষ কি কোনো অসুখ? অনেকে বলে স্বপ্নদোষ হলে শরীরের সব শক্তি বের হয়ে যায়। আসলে কি হয়?
স্বপ্নদোষ কোনো অসুখ নয়। বয়ঃসন্ধিকালে স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীরের কোন শক্তি বের হয় না এবং শরীর দুর্বলও হয় না। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ছেলেদের শরীরের ভিতর বীর্য তৈরি হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মেই আবার তা শরীর থেকে বের হয়ে যায়। শরীরের ভিতরে বীর্য ধরে রাখার কোনো উপায় নেই। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে স্বপ্নদোষ হয়ে কাপড় ভিজে যাওয়ায় অনেক ছেলেই অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে। প্রায় সব ছেলেরই এ রকম হয়ে থাকে এবং এটি তোমার বেড়ে ওঠায় কোনো বাধা নয়। তবে যদি কেউ প্রয়োজন মনে করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে।
৮) সেক্স ও জেন্ডার কি?
‘সেক্স’ নারী ও পুরুষের শারীরিক পার্থক্য নির্দেশ করে। ‘জেন্ডার’ সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট নারী-পুরুষের মধ্যকার পার্থক্য নির্দেশ করে। জন্মগতভাবে ছেলে ও মেয়ে শিশুর মধ্যে লিঙ্গগত পার্থক্য ছাড়া আর কোনো পার্থক্য না থাকলেও পরবর্তীতে সামজিক কারনে নারী ও পুরুষের মধ্যে আচার আচরনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। সামাজিকভাবে তৈরী নারী ও পুরুষের পরিচয়, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং ভূমিকাকেই জেন্ডার বলা হয়।
৯) যৌনরোগ কী? যে রোগগুলো মূলত অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়ায় সেগুলোকে যৌনরোগ বলা হয়ে থাকে। অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক মানে হলো কনডম ব্যাবহার না করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা। তবে কোনো কোনো সময় যৌনরোগগুলো অন্যভাবেও ছড়াতে পারে। যৌনরোগ বিভিন্ন ধরনের হয়। এই রোগসমূহ ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট এবং ভাইরাস ঘটিত হতে পারে। এ ধরনের কিছু যৌনরোগের মধ্যে আছে গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া, হার্পিস, এইচআইভি/ এইডস, হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি ইত্যাদি।